২২ জুলাই ২০১৬

Dilip Poddar

ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাক।

ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাক।
ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাক।


ডায়াবেটিস মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো হার্ট অ্যাটাক। ডায়াবেটিস মানব দেহের প্রাচীনতম রোগগুলির মধ্যে অন্যতম। আরোটিয়াস ১৫০ খৃৃষ্টাব্দে এ রোগের নাম দেন ডায়াবেটিস, যার অর্থ সাইফন। তার মতে এ রোগে রোগীর ওজন কমে যায় ও পচনশীল ঘা হয়। ১৯০৯ সালে ডি মেয়ার অগ্ন্যাশয়ের হরমোনকে ইনসুলিন নামকরণ করেন। ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন তৈরি করার ক্ষমতা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয় নতুবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও ইনসুলিন তার কাজ করতে পারে না।

১৯৮৬ সালে মার্কুনে ঈষ্ট থেকে জৈব সংশেস্নষণ করে হিউমেন ইনসুলিন তৈরী করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। চলতি শতাব্দীর গোড়ার দিক পর্যন্ত বহু লোক মৃত্যুবরণ করেছেন এই নীরব ঘাতক ব্যাধির আক্রমণে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যথেষ্ট তথ্য ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে, ফলে ডায়াবেটিসে মৃত্যুর হার অনেক কমে গিয়েছে।

ডায়াবেটিস কিঃ গস্নুকোজ আমাদের শরীরের শক্তির মূল উৎস। শরীর ইনসুলিন নামের একটি হরমোন তৈরী করে। ইনসুলিন রক্ত থেকে অতিরিক্ত গস্নুকোজ বের করে নিয়ে শরীরের কাজে লাগাতে সাহায্য করে এবং রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখে।

আমাদের রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকার কথা। যখন রক্তের গস্নুকোজের মাত্রা সার্বক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি থাকে তখন সে অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে।

আমাদের অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে বিটা সেল নামের বিশেষ ধরনের কোষ থাকে। এই বিটা সেল থেকে ইনসুলিন নামক হরমোন তৈরী হয়। ইনসুলিন আমাদের রক্তের গস্নুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ইনসুলিন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং কোষকে, রক্ত থেকে গস্নুকোজ নিতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা সব সময়ই একটি সহনশীল মাত্রায় থাকে। এমনকি খাবার খাওয়ার পরপরই রক্তে হঠাৎ করে যে গস্নুকোজ বেড়ে যায় তাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।


ডায়বেটিস প্রধানত দু’ধরনের। টাইপ-১ ও টাইপ-২। বেশিরভাগ মানুষ টাইপ -২ ডায়াবেটিসে ভুগে থাকে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিন তৈরি করার ক্ষমতা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয় নতুবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও ইনসুলিন তার কাজ করতে পারে না।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসঃ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিন তৈরি করার ক্ষমতা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রোগীর রক্তে গস্নুকোজের পরিমাণ নির্ধারিত পরিমাণ থেকে অনেক বেড়ে যায়। টাইপ -১ ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু অবস্থায় অথবা বাল্যকালেই দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ টাইপ ১-ডায়াবেটিসে ভুগে থাকে। এ ধরনের রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। এটিকে ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস বলা হয়। এটি সাধারণত ৪০ বছরের কম বয়সের লোকদের হয়ে থাকে। এদের কিটোএসিডোসিস নামক এক প্রকার জটিলতা হতে পারে। যার সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হতে পারে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসঃ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয় নতুবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরী হলেও ইনসুলিন তার কাজ করতে পারে না। ডায়াবেটিস রোগীর শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগে থাকে। ২০২৫ সালে নাগাদ টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি।

অনেক সময় ডায়াবেটিসের লক্ষণ মৃদু হয়ে থাকে যার ফলে এটি ধরা পড়তে অনেক সময় লাগে। এটি মধ্য বয়সে অথবা তারও পরে ধরা পড়ে। টাইপ -২ ডায়াবেটিস এটি প্রধানত বংশগত রোগ। এটিকে ইনসুলিন অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস বলে। সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সের লোকদের এটা হয়ে থাকে। যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শারীরিক প্ররিশ্রমের কাজ করেন না, নিকট-আত্নীয়দের ডায়াবেটিস আছে-তাদের এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ইনসুলিন অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সাধারণত ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন, ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে বেশি ভূমিকা রাখে। ক্ষেত্রবিশেষে খাবার ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

হার্ট এ্যাটাক কি :- হ্নদপিন্ডের রক্তনালীতে চর্বি জমে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে যে রোগের উৎপত্তি হয় তাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলে। হার্টএ্যাটাক বা মায়োককার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান এই রোগের একটি বহিঃপ্রাকাশ। হ্নদপিন্ডের রক্তনালীতে চর্বি জমে ও রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল একেবারে বন্ধ হলে হ্নদপিন্ডের পেশীর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, একে মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান বলা হয় । মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই রোগটি। যুক্তরাজ্যে এক সমীক্ষ্যায় দেখা যায় ১/৩ ভাগ পুরুষ এবং ১/৪ ভাগ মহিলা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজে মারা যায়। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজে হার্টএ্যাটক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান ছাড়া ক্রনিক স্ট্যাবল এনজিনা ও আনস্ট্যাবল এনজিনা হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীর হার্ট অ্যাটাক :- হার্ট অ্যাটাকের একটি প্রধান উপসর্গ বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যাথা হওয়া । কিন্তু অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীর হাট অ্যাটার্ক হলেও বুকে ব্যথা অনুভব হয় না। শতকরা ২৫% ডায়াবেটিস রোগীর ব্যথাহীন বা নিরব হার্ট অ্যটাক হয়। রোগী অনেক সময় বুঝতেও পারে না সে কখন হার্ট অ্যাটক করেছেন, ফলে হঠাৎ মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীর নীরব মৃত্যু তাহলে হার্ট অ্যাটাক থেকে হতে পারে। তবে কিছু উপসর্গ থেকে ধারণা করা যায়।

হঠাৎ করে প্রচুর ঘেমে যাওয়া, শরীর দুর্বল লাগা, শ্বাস কষ্ট হওয়া অথবা রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের জটিলতায়ও এধরনের সমস্যা হতে পারে। ইসিজি করলেই হার্ট অ্যাটাকে বুঝা যায়। ব্যথাহীন হার্ট অ্যাটাকের রোগীরা অনেক পরে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসা শুরু হতে বিলম্ব হয়।

ডায়াবেটিস হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণঃ হার্ট অ্যাটাকের পাঁচটি প্রধান কারণ হলো ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য ও পজেটিভ ফেমিলি হিসট্রি। ডায়াবেটিস রোগীর ৩ থেকে ৫গুণ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা বেশী থাকে। ডায়াবেটিস থাকলে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের প্রিমেনুপোজার প্রোটেকশান থাকে না। ডায়াবেটিসের ফলে রক্তনালীতে চর্বি জমে রক্তনালী সরু করে, যার জন্যে হার্টের রক্ত চলাচলে বাধাসৃষ্টি হয়।

অনেক দিনের ডায়াবেটিস, বয়সে বেশী, সিস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার ইনসুলিনিমিয়া, রক্তে ট্রাইগিস্নসারাইডের পরিমাণ বেশি আর এইচডিএল বা ভাল কোলেস্টেরেলের পরিমান কম থাকলে, প্রোটিনিউরিয়া ইত্যাদি থাকলে ডায়াবেটিস রোগিদের হার্ট অ্যটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশী থাকলে তাদের রক্তে অণুচক্রিকা খুব তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের করোনারী রক্তনালী বন্ধজনিত হ্নদরোগ বেশী হয়।

৭৫% ডায়াবেটিস রোগির হার্ট অ্যাটাকের সময় বুুকে ব্যথা হয়। শেষ রাত ও সকাল ৯টার আগ পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাকের হার অনেক বেশী। তাই শেষ রাতে বা ভোরের সময়কার বুকে ব্যথাকে অবহেলা করা ঠিক নয়।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়ঃ হার্ট অ্যাটাকের জন্য কিছু কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দায়ী। এগুলো এড়িয়ে চলতে পারলে হার্ট অ্যাটাক অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। যেমনঃ

ধূমপান সম্পূর্ণ বর্জন করুন। সাদা পাতা, জর্দা, নস্যি ইত্যাদি পরিহার করুন। যারা ধূমপান করেন, ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা যায় না। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে প্রবল করুন এবং এখনই ধূমপান একেবারে ছেড়ে দিন।
যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন ও রক্তচাপ পরীক্ষা করাবেন। অনেকে উচ্চ রক্তচাপ কমে গেলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করেন। পুনরায় রক্তচাপ বেড়ে গেলে ওষুধ খেয়ে থাকেন। এ ধরনের অনিয়মিত ওষুধ সেবন ও রক্তচাপ উঠানামা হার্ট অ্যাটাক হতে সহায়তা করে্‌। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রেণে রাখবেন।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। যাদের বয়স ৪০-এর বেশি এবং জানেন না ডায়াবেটিস আছে কিনা, তারা রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নিন ডায়াবেটিস আছে কিনা।
হাইপারলিপিডেমিয়া বা রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের আধিক্য থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চর্বি যাতীয় খাবার কম খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রক্তের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে।
মদ্যপান হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় তাই মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি ক্ষেত্রবিশেষে পরিহার করে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওজন ঠিকা রাখা। বাড়তি ওজন অবশ্যই কমাতে হবে। ওজন কমানোর জন্য মিষ্টি খাবার ও চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখার মাত্রা হলো বিএমআই ১৮•৫-২৪•৯ কেজি/মি২ মধ্যে রাখা। আর কোমরের ব্যাস পুরুষের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি বা তার কম এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চি বা তার কম রাখতে হবে।
পরিমিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। কমপক্ষে দৈনিক ৩০ থেকে ৬০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ বার হাটা, জগিং, সাইকেল চালানো অথবা অন্যান্য মুক্ত বাতাসে ব্যায়াম করা যেতে পারে। উত্তম হলো সপ্তাহে প্রতিদিন এ পরিমাণ ব্যায়াম করা।
হাইরিক্স গ্রম্নপ রোগীদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা।
হার্টের জন্য সহনীয় খাবার খাওয়া যেমন- লবণ কম খাওয়া, চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, শাক-সবজি ও ফলমূল বেশী খাওয়া।
নিয়মিত ঘুমানো, মানসিক দুঃচিন্তা না করা, হঠাৎ উত্তেজিত না হওয়া।
দুশ্চিন্তামুক্ত, সুন্দর ও সাধারণ জীবন যাপন করুন। এতে হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে।

Dilip Poddar

About Dilip Poddar -

He is 25 year old geeky nerd from a little town in India. He is an avid Blogger, Web Designer and Freelancer. He is mostly interested in SEO and playing with codes.our New Blogger ko hamesha honest ka sath help karte.

Subscribe to this Blog via Email :