২২ জুলাই ২০১৬

Dilip Poddar

ঘুম ঠিকমতো না হলে যে ভয়নক রোগগুলি হয়।

ঘুম ঠিকমতো না হলে যে ভয়নক রোগগুলি হয়।

ঘুম ঠিকমতো না হলে যে ভয়নক রোগগুলি হয়।


শিল্পোন্নত দেশগুলোর অন্তত দশ শতাংশ মানুষ ঘুমের সমস্যায় ভোগে৷ অথচ সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কী হতে পারে, তা গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা৷
নিদ্রাহীনতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা-
বুধবার ভোর, ছয়টার মতো বাজে৷ ডানিয়েলা স্পেট বিছানা ত্যাগ করছেন৷ আগামী ৩৬ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকবেন তিনি৷ এটা একটা পরীক্ষা, যাতে স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ পেশায় সাংবাদিক ডানিয়েলা স্পেট এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি ঘুমাতে ভালোবাসি৷ ফলে লম্বা সময় জেগে থাকাটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে৷ এমন নয় যে আমি কখনো রাত জাগিনি৷ কিন্তু তখন সকালে ঘুমিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছি৷ তবে এবার আমি সকালেও ঘুমাবো না৷ চেষ্টা করবো কাল সন্ধ্যা অবধি সজাগ থাকতে৷ শরীরের উপর বেশিক্ষণ জেগে থাকার প্রভাব দেখতে চাই৷”
আচ্ছা আমরা ঘুমাই কেন? ঘুমের কি তেমন কোনো প্রয়োজন আছে? এ নিয়ে গবেষণা হলেও এখনো তার ফলাফল সেভাবে পাওয়া যায়নি, আসল কারণ অনেকটা অন্ধকারেই রয়ে গেছে৷ একথা বলেন ডাক্তার হান্স গ্যুন্টার ভেস, যিনি এক স্লিপিং ল্যাবোরেটরির প্রধান৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে যা আমরা সবাই জানি সেটা হলো, রাতে কারো ঘুম না হলে তার মধ্যে পরদিন সকালে ক্লান্ত ভাব, কাজে অমনোযোগী ও অল্পতে রেগে যাওয়া, এসব লক্ষণ দেখা দেয়৷’’
ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. লেনার্ট ক্নাক গবেষণার দায়িত্ব নিয়েছেন৷ এই চিকিৎসক সাধারণত তাঁর রোগীদের ভালোভাবে ঘুমাতে সহায়তা করেন৷ তবে এবার বিপরীতটা জানতে আগ্রহী তিনি৷ ইচ্ছাকৃতভাবে না ঘুমানোর মাধ্যমে তা জানা যেতে পারে৷
স্বাভাবিক অবস্থায় পরীক্ষা
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার পরিণতি জানতে ড. ক্নাক শুরুতে ডানিয়েলাকে স্বাভাবিক অবস্থায় পরীক্ষা করছেন৷ তিনি অনিয়মিত সিগন্যাল দেখতে এতটা সময় নিচ্ছেন তা মাপা হচ্ছে৷ দশ মিনিটের পরীক্ষা৷ এই বিষয়ে ড. ক্নাকে বলেন, ‘‘স্বাভাবিক অবস্থার ফলাফল বেশ ভালো এসেছে৷ তবে আগামীকাল একই পরীক্ষায় কী ফলাফল আসে তা আমি দেখতে আগ্রহী৷ এরপর দুটো ফলাফল তুলনা করবো৷”
না ঘুমিয়ে থাকা
একটানা ষোল ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকা কোনো ব্যাপার নয়৷ অধিকাংশ মানুষই এই সময়টা না ঘুমিয়ে কাটায়৷ তবে দুপুরে খাওয়ার পর অনেকের ঘুম আসে৷ সন্ধ্যায় বেড়াতে যাওয়া, কফি পান আর ছবি দেখে ঘুম থেকে দূরে থাকা যায়৷ কিন্তু তারপর? ডানিয়েলা কিন্তু না ঘুমিয়ে থাকতে বদ্ধপরিকর৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন প্রায় ভোর চারটা বাজে৷ আমি জেগে থাকার জন্য আর কী করবো তা ভেবে পাচ্ছি না৷ তবে আমি সজাগ থাকবোই৷”
পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন
গত ত্রিশ ঘণ্টা ধরে না ঘুমিয়ে আছেন ডানিয়েলা৷ তাঁকে দেখলেই সেটা বোঝা যাচ্ছে৷ তাঁর এখন ঘুম দরকার৷ শরীরের যাবতীয় কার্যকলাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে, শক্তি ফিরে পেতে এটা দরকার৷
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে মানুষ নানা রকম ভুল করতে পারে, অসুখ হতে পারে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ যে নিয়মিত কম ঘুমায় তার স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে৷ ড. লেনার্ট ক্নাক এর কথায়, ‘‘ঘুমের অভাবে শরীরে মূলত দু’ধরনের বড় জটিলতা দেখা দিতে পারে৷
প্রথমত হৃদযন্ত্রে সমস্যা, মাথা ব্যথা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা স্ট্রোক হতে পারে৷ দ্বিতীয়ত বিষণ্ণতা এবং ভয়ের প্রবণতা বাড়তে পারে কম ঘুমের কারণে৷”
সজাগ শুয়ে থাকা
আবারও পরীক্ষা৷ ডানিয়েলাকে এবার একটি অন্ধকার ঘরে বিশ মিনিট সজাগ শুয়ে থাকতে হবে৷ এই টেস্টে যে পাশ করবে, সে হয়তো গাড়িও চালাতে পারবে৷ কিন্তু পাঁচ মিনিট পরেই মনিটরের সিগন্যালে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে৷ ডানিয়েলা ঘুমিয়ে পড়েছে৷ অথচ রিঅ্যাকশন টেস্ট তখনো বাকি৷ তাই তাঁকে ঘুম থেকে তুলতে হলো৷ এই পরীক্ষায় প্রথমবার ডানিয়েলা গড়ে ২২০ মিলিসেকেন্ডে সাড়া দিয়েছিল৷ কিন্তু এখন?
ড. ক্নাক বলেন, ‘‘গতকালের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি আস্তে সাড়া দিচ্ছেন ডানিয়েলা৷ আমাদের মনে হয় পরীক্ষায় ইতি টানা উচিত৷ কারণ এর চেয়ে খারাপ ফলাফল আর হতে পারে না৷”
পরিকল্পিত সময়ের এক ঘণ্টা আগেই ডানিয়েলা স্পেট এর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে৷ ৩৫ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকা একটা অভিজ্ঞতা বটে৷
মধ্যবয়সি নারীদের ঘুমের সমস্যা বেশি…….
মধ্যবয়স্ক নারীদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশের ঘুমের সমস্যা রয়েছে৷ আর এই সমস্যার সঙ্গে জীবনমান, দীর্ঘস্থায়ী অসুখ এবং ওষুধের সম্পর্ক রয়েছে৷ সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে এসব তথ্য৷
ফিনল্যান্ডের টুর্কু বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. পাইভি পোলো৷ তিনি বলেছেন, ‘‘সাধারণত আমরা ধরে নেই রজোনিবৃত্তির কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় তাই রজোনিবৃত্তিই সব সমস্যার কারণ৷” ফলে চিকিৎসকরা এটি মাথায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে মনে করেন পোলো৷ তিনি তাঁর গবেষণায়, ঘুমের সঙ্গে অন্যান্য জটিলতার সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন৷
সাম্প্রতিক গবেষণায় তাই ঘুম সমস্যার অন্যান্য কারণের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে৷ পোলো এবং তাঁর সহকর্মীরা তাদের গবেষণায় ৮৫০ জন মধ্যবয়সি নারীর সহায়তা নিয়েছেন৷ তাদের বয়স গড়ে ৪২ বছর৷ এই নারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুখ রয়েছে৷ আর ২৮ শতাংশ নারী নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করেন৷
এই নারীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, রাতের বেলা তাদের ঘুম ভেঙে যায়৷ ষাট শতাংশের সপ্তাহে অন্তত একবার এই সমস্যা হয়৷ ষোল শতাংশ নারীর সহজে ঘুম আসে না আর বিশ শতাংশের খুব সকালেই ঘুম ভেঙে যায়৷ সপ্তাহে অন্তত একদিন এমন হয়৷
সকালবেলা ঘুমভাব কাটে না ৪২ শতাংশ নারীর আর সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায় ৩২ শতাংশের৷
বলাবাহুল্য, ঘুমের সমস্যা যে-কোনো বয়সি মানুষেরই হতে পারে, তবে নারীদের মধ্যে এই সমস্যা একটু বেশি৷ মাসিক ঋতুচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হরমোনের পরিবর্তন এবং রজোনিবৃত্তিকে এজন্য কিছুটা দায়ী করা যেতে পারে, বলছেন গবেষকরা৷ তবে তারা মনে করেন, মাঝেমাঝে মদ্যপানের সঙ্গে ভালো ঘুম এবং কর্মস্থলে ঘুমিয়ে না পরার সম্পর্ক রয়েছে৷
ঘুমের সমস্যার সঙ্গে মেয়েদের ওজন এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক তেমন একটা খুঁজে পাননি গবেষকরা৷ আসলে গবেষণায় সহায়তাকারী নারীরা সবাই সাধারণ শারীরিক গঠনের অধিকারী ছিলেন৷ সম্ভবত সেকারণেই এই বিষয়টি উঠে আসেনি৷ তবে এর আগে পরিচালিত এক গবেষণায় স্থুলতার সঙ্গে নিদ্রাহীনতার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা৷
ড. পাইভি পোলো বলেন, ‘‘ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা আমাদের জীবনের এক-তৃতীয়াংশই ঘুমিয়ে কাটাই৷ আর ঘুমের সমস্যা কোনো রোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে৷ মানসিক অবস্থার কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ চিকিৎসকদের এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷”
আদর্শ ঘুমের ওষুধের সন্ধানে জার্মান গবেষকরা..
ঘুমের ওষুধের পক্ষে ভালো কোনো কথাই শোনা যায় না৷ এগুলো মানুষকে আসক্ত করে ফেলে এবং এটা বর্জন করার পক্ষেই সবার মত৷ কিন্তু যাঁরা ভয়াবহ অনিদ্রা রোগে ভোগেন, তাঁদের এ ধরনের ওষুধ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ কি আছে?
অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া রোগী অ্যানি মেরি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ১৯ বছর আগে এ রোগের শুরু৷ একেবারেই ঘুমাতে পারছিলেন না তিনি৷ তিনি বললেন, যাঁদের এ অসুখ নেই তাঁরা কল্পনা করতে পারবে না এটা কতটা ভয়াবহ৷
মায়ের মৃত্যুর পরই এ অসুখ শুরু হয় মেরির৷ তাঁর মনে হতে থাকে, তিনি তাঁর মায়ের শবদেহ ছুঁয়ে বসে আছেন৷ মানুষের শরীর যে এতটা শীতল হতে পারে, এটা তাঁকে ভয়ঙ্কর আঘাত করেছিল৷ ঘুমের মধ্যে একথাটা ভেবেই একরাতে তার ঘুম ভেঙে যায়৷ সেদিন আর ঘুমাতে পারেননি তিনি৷
এরপর মেরি এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন৷ সেদিন তিনি এতটাই কষ্টে ছিলেন যে চিকিৎসকের সামনেই কেঁদে ফেলেন৷ এখন তাঁর বয়স ৬৮৷ মেরি জানালেন, এ বিষয়ে এত চিকিৎসক আছেন, কিন্তু কেউই তাঁকে সাহায্য করতে পারেননি৷
অনেক বছর পর অ্যানি মেরির পরিবার তাঁর জন্য একটা সমাধান খুঁজে পায়৷ প্রতিরাতে তিনি এখন একটি ঘুমের ওষুধের এক তৃতীয়াংশ গ্রহণ করেন৷ দশ বছর আগে এটা শুরু করেছিলেন৷ তিনি জানালেন, এছাড়া ভিন্ন কোনো পথ ছিল না৷ তাঁর মনে হয়েছিল, হয় এটা তাঁকে খেতে হবে, নয়ত তিনি মারা যাবেন৷
দুশ্চিন্তা: ঘুমের শত্রু
জার্মানির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত রবার্ট কখ ইন্সটিটিউটের মতে, জার্মানদের ২৫ ভাগই অনিদ্রা রোগে ভুগছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ-এর সেন্টার ফর স্লিপ ডিসঅর্ডার্স রিসার্চ-এর একটি জরিপ অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৫ ভাগ মার্কিন নাগরিক ক্রনিক ইনসমনিয়ায় ভোগেন৷
ইনসমনিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানসিক সমস্যার কারণে হয় বলে জানালেন মাইৎস শহরের একটি হাসপাতালের ‘স্লিপিং সেন্টার’-এর পরিচালক হান্স-গ্যুন্টার ভেস৷ তিনি জানালেন, রোগীরা ভুলে যান, কিভাবে বিশ্রাম নিতে হবে৷ এর ফলে থাইরয়েডের কার্যক্রমেও সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ এসব রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া এবং চাকুরি ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়৷
ঘুমের জন্য মস্তিষ্ককে জোর
স্বাভাবিকভাবে ঘুমানো যে কারো জন্য খুব ভালো৷ কিন্তু মেরির মতো যাঁরা কোনো সাহায্য ছাড়া ঘুমাতে পারেন না, তাঁদের জন্য গবেষকরা আদর্শ ঘুমের ওষুধ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন৷ এমংন এক ওষুধ, যার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই৷
১৯৫০ সালে চিকিৎসকরা বুঝলেন, এসব ওষুধ যাঁরা গ্রহণ করছেন, তাঁরা এতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন৷ এরপরই বাজারে এলো বেনজোডায়াসেপাইন৷ ভ্যালিয়াম এমনই একটি ওষুধ, যা এখন বেশ পরিচিত৷ যা মস্তিষ্কের জিএবিএ গ্রাহককে তাদের কাজে সাহায্য করে এবং মানুষকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে৷
এরপরও আরও একটি ওষুধ এসেছে যার নাম জেড ড্রাগস৷ যেমন জলপিডেম এবং জপিক্লোন৷ বেনজোডায়াসেপাইনের চেয়েও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম৷ ইনসমনিয়ার ক্ষেত্রেই এগুলোকেই এখন সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হিসেবে বলা হচ্ছে৷
স্বাভাবিক ঘুম নয়
সব ধরনের ঘুমের ওষুধ, বিশেষজ্ঞরা যাদের হিপনটিক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন, এ সবের একটা সাধারণ দিক আছে, আর সেটা হল রোগীর ঘুমের অবস্থার পরিবর্তন৷
তারা কেবল গভীর ঘুম এবং আরইএম – ঘুমের এই দুটি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকে৷ নতুন ঘুমের ওষুধগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হলেও – কিছু তো অবশ্যই আছে, আর তা হলো ঘুম থেকে উঠে অবসাদগ্রস্ত হওয়া৷ এমনকি ওষুধ খাওয়ার কারণে রোগীরা মধ্যরাতে গাড়িও চালাতে পারে না৷
তবে দুই সপ্তাহের বেশি ব্যবহারের ফলে অনেক সময় এগুলোর উপর আসক্তি বেড়ে যায়, এগুলো ছাড়া আর ঘুম আসে না৷ অথবা এগুলো তেমন কাজ দেয় না৷
নতুন হিপনটিকের আশায়
ভেস অবশ্য বলছেন, ভবিষ্যতে ইনসমনিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে ডুয়েল অরেক্সিন রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট বা ডিওআরএ৷
গবেষকরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন, নিউরোট্রান্সমিটার অরেক্সিন দেহের সার্কাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখে৷ দিনের বেলা অরেক্সিনের মাত্রা থাকে বেশি, যাতে সবাই জেগে থাকতে পারে৷ রাতের বেলায় অবশ্য এর মাত্রা কমে যায়, যার কারণে ঘুম আসে৷
ডিওআরএ-র অরেক্সিনের মাত্রা কমিয়ে দিলে মানুষ ঘুমাতে পারবে৷ তাই এ নিয়ে এরইমধ্যে কাজ করা শুরু করেছেন জার্মান গবেষকরা৷
ঘুমের জন্য ওষুধ নয়, দুধ……….
রাতে ঘুমানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের ঘুমের ওষুধের কথা আমরা শুনেছি৷ বাজারে এবার এসেছে ঘুম পাড়ানি দুধ৷ এই দুধ মেলাটোনিন সমৃদ্ধ৷ রাতে শোওয়ার আগে খেলে নাকি খুব ভাল ঘুম হবে৷
জার্মানির দক্ষিণে মিউনিখ শহরের একটি কোম্পানি বাজারে এনেছে মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধ৷ বলা হচ্ছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম এক গ্লাস দুধ খেলে রাতে খুব ভাল ঘুম হবে৷ আর মনে হয় ঠিক এর জন্যই অপেক্ষা করে ছিল জার্মানির হাজার হাজার মানুষ৷ কারণ, ‘রাতে ঘুম হয়নি বা খাটা-খাটনি বেশি যাচ্ছে৷ রেস্ট নেওয়ার সময় পাচ্ছি না’ – এ ধরণের অভিযোগ সারাক্ষণই শোনা যাচ্ছে৷ সেই সমস্যা সামাধানে এগিয়ে এসেছে মিউনিখের একটি কোম্পানি৷
বাভারিয়া অঞ্চলের সবুজ মাঠ, উঁচু-নিচু পাহাড় আর ফাঁকে-ফাঁকে অসংখ্য খামার – এ দৃশ্য কমবেশি সবার কাছেই পরিচিত৷ গরু চড়ে বেড়াচ্ছে, হাঁস-মুরগি ছোটাছুটি করছে – খামার বাড়িগুলোতে এ দৃশ্য দেখা স্বাভাবিক৷ অনেকেই ছুটি কাটাতে চলে যান গ্রামের এই স্নিগ্ধ-কোমল পরিবেশে৷ আর ইদানিং এখানেই হানা দিচ্ছে নানা ধরণের খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানি৷ এর মধ্যে একটি কোম্পানি গবেষণা করে জানিয়েছে, দুধে মেলাটোনিনের পরিমাণ বেশি থাকলে সেই দুধ পান করার পর খুব ভাল ঘুম হবে৷ প্রায় ছয় মাস ধরে চলে এই গবেষণা৷ এরপর বাজারে আসে ‘নাখট মিলশ ক্রিস্টালে’ অর্থাৎ নাইট মিল্ক ক্রিস্টাল কোম্পানির মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এই দুধ রপ্তানি শুরু করে দিয়েছে জার্মানি৷ অস্ট্রিয়ার বাজারে এই দুধ পাওয়া যাচ্ছে৷ কাই ওপেল ‘নাখট মিল্শ ক্রিস্টাল’ কোম্পানির মুখপাত্র৷ তিনি জানান, ‘‘প্রতিটি প্রাণী এমনকি মানুষের মধ্যেও মেলাটোনিনের উপাদান রয়েছে৷ এই মেলাটোনিনই দিন এবং রাতের সাইকেলকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ প্রাকৃতিক ছন্দটাকে ধরে রাখে৷”
মেলাটোনিন সমৃদ্ধ ট্যাবলেট অনেক আগে থেকেই অ্যামেরিকায় বিক্রি হচ্ছে৷ বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে যে কেউই তা কিনতে পারে৷ এছাড়া মেলাটোনিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরণের সফ্ট ড্রিঙ্কও সেখানে পাওয়া যায়৷ তবে ইউরোপে মেলাটোনিন এত সহজলভ্য নয়৷ এখানে যত্রতত্র তা বিক্রি করা বৈধ নয়৷ অ্যামেরিকার ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনস্ট্রেশন নতুন করে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে৷
বাস্তব সত্য হল যে সব দুধ আমরা বাজার থেকে কিনি সেগুলোতে মেলাটোনিনের পরিমাণ একেবারেই নেই৷ যদি তাই হত তাহলে দেখা যেত সকালের নাস্তার টেবিলেই মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধ খেয়ে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই৷ তাই এসব দুধ থেকে মেলাটোনিন একেবারে সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ রাতে পান করার জন্য দুধে মেলাটোনিনের উপাদান যোগের প্রশ্ন এখানেই এসেছে৷ আলোর সংস্পর্শে মেলাটোনিন নষ্ট হয়ে যায়৷ আলো থেকে তাই দুধ দূরে রাখতে হবে৷ কাই ওপেল আরো জানান, ‘‘গরুর দিনের বেলা প্রচুর আলো বাতাসের প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু রাতে একেবারেই না৷ সাধারণত দেখা যায় গরুর গোয়াল ঘরেও সারারাত হালকা বাতি জ্বলছে৷ এ কারণেই দুধে মেলাটোনিনের পরিমাণ কম, মেলোটোনিনের পরিমাণ গরুর রক্তেও কম৷ আমরা যা করেছি তা হল, গোয়াল ঘর থেকে আলো একেবারে সরিয়ে নিয়েছি৷ এক ধরণের অত্যন্ত হালকা লাল আলো শুধু জ্বলছে৷ এই আলো কোনো ক্ষতি করবে না৷ মেলাটোনিন উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে না৷”
তবে সবাই ‘মেলাটোনিন’-এর যুক্তি গ্রহণ করতে নারাজ৷ ইংল্যান্ডের লফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের প্রধান জিম লোর্ন মেলাটোনিনের এই চমকপ্রদ তথ্য মেনে নিতে পারছেন না৷ তাঁর প্রশ্ন একটি গরু যদি সারারাত আলোর দিকে তাকিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে মেলাটোনিন কীভাবে উৎপন্ন হবে? জিম সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘মেলাটোনিন ঘুমে সহায়তা করে না৷ এটা শুধু শরীরকে মনে করিয়ে দিতে পারে এখন রাত বা এখন দিন৷ এখন জেগে থাকা যায় বা এখন ঘুমাবার সময়৷ শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়িকে সময়মত চলতে মেলাটোনিন সাহায্য করে৷ কিন্তু কোনো নিশাচর প্রাণীকে কোনো অবস্থাতেই রাতে ঘুম পাড়ানো যাবে না৷ এসব প্রাণীর মেলাটোনিন কাজ করে অন্যভাবে৷ মেলাটোনিন কীভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে তা আমি এখনো বুঝতে পারছি না৷”
তবে একটি কথা সত্যি তা হল অন্য সাধারণ দুধের চেয়ে মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধের দাম অনেক বেশি৷ অনেকেই বলছে, ঘুমের জন্য কোনো ওষুধ বা দুধ চাই না, চাই মানসিক প্রশান্তি৷
গাড়ি চালকের ঘুম ঠেকাতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র….
নগরীর যানজটের মধ্যে নিশ্চিন্তে আরাম করে মোটামুটি একই গতিতে গাড়ি চালানোর কোন সুযোগ হয় না কখনো৷ ফলে হয়তো ঘুম আসে না৷ কিন্তু যখন দূরের পথ৷ সোজা মহাসড়ক৷ বেশ ফাঁকা রাস্তা৷ এমন সময়ই ঘুম এসে ভিড় করে গাড়ি চালকের চোখের পাতায়৷
সোজা মহাসড়ক৷ বেশ ফাঁকা রাস্তা৷ এমন সময়ই ঘুম এসে ভিড় করে গাড়ি চালকের চোখের পাতায়৷
তবে বিজ্ঞানীরা এবার এমন ব্যবস্থা করতে যাচ্ছেন যে, চালকের চোখের পাতা মুদে আসলে সাথে সাথেই জোরেশোরে সংকেত দিয়ে উঠবে গাড়িতে থাকা যন্ত্র৷ জার্মানির ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউটের ডিজিটাল মিডিয়া প্রযুক্তি শাখার গবেষকরা জানালেন এমন খবর৷ মানুষের চোখের পাতার নড়াচড়ার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে এমন একটি যন্ত্র তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন৷ ফলে গাড়ি চালকের চোখের পাতা ঘুমে আচ্ছন্ন হতে গেলেই এটি সতর্ক সংকেত বেজে উঠবে৷
এই যন্ত্রটি উদ্ভাবনের পরই নিয়ে আসা হয়েছে স্টুটগার্টের এক মেলায়৷ চোখের সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হচ্ছে সেই মেলায়৷ তবে ঠিক এখনই গাড়ির চালকরা ব্যবহার করতে পারছেন না দুর্ঘটনা রোধে সহায়ক এই যন্ত্র৷ বরং প্রতীক্ষা করতে হবে আরো তিন মাস৷ আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে একটি গাড়িতে চালু করে এর কর্মদক্ষতা যাচাই করবেন গবেষকরা৷ পরীক্ষামূলক ব্যবহার সফল হলে আগামী বছরের শুরুতেই গাড়ি নির্মাতাদের কাছে এটি বিক্রির জন্য বাজারে নামানো হতে পারে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন ইন্সটিটিউটের মুখপাত্র পেটার হুজার৷
তিনি বলেন, এতদিন পর্যন্ত এমন কাজের জন্য যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হতো তার দশ ভাগের একভাগ খরচ হবে এই নতুন আইট্র্যাকারে৷ এছাড়া এটি যেকোন মডেলের গাড়িতেই স্থাপন করা যাবে৷ শুধু তাই নয়, আগের প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রত্যেক চালকের জন্য আলাদাভাবে অনেক সময় ব্যয় করে প্রস্তুতি নিতে হতো নির্দিষ্ট ক্যামেরা সদৃশ যন্ত্র সঠিকভাবে স্থাপন ও চালু করতে৷ কিন্তু এটির জন্য চালকভেদে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে স্থাপনের প্রয়োজন পড়ছে না৷ প্রয়োজন হচ্ছে না কোন ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের৷ তিনি জানান, চালকের সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে এতে থাকছে চার থেকে ছয়টি ক্যামেরা যেগুলো চালকের চোখের পাতার অবস্থান এবং দৃষ্টি রেখার উপর নজর রাখবে৷ এমনকি চালক ডান কিংবা বাম দিকে দৃষ্টিপাত করলেও এটি সমানভাবে কাজ করতে পারে৷
যন্ত্রটি সেকেন্ডে ২০০টি পর্যন্ত ছবি ধারণ এবং বিশ্লেষণ করে এমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে এতোটা ভালোভাবে কাজ করলেও যন্ত্রটির আকার কিন্তু বড় নয়৷ এটির আকার একটি দেয়াশলাই এর বাক্সের অর্ধেক৷ গবেষকরা আরো জানালেন, এটি যে শুধু গাড়ি চালকের কাজে লাগবে তা নয়, বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চোখে অস্ত্রোপচারের সময়ও এটি ব্যবহার করা যাবে, চোখের পাতার প্রতিটি নড়াচড়ার দিকে নজর রাখার জন্য৷ এমনকি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের ঠিক কোন অংশের দিকে একজন ভোক্তা বেশি সময় ধরে দৃষ্টি ফেলছে সেটিও নির্ণয় করা সম্ভব হবে এই যন্ত্র দিয়ে৷ ফলে ভোক্তার দৃষ্টি বিবেচনা করে বিজ্ঞাপনের মান এবং পণ্যের চাহিদার বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা৷
আলো জ্বালিয়ে ঘুমাবেন না, ওজন বেড়ে যাবে!…..
ঘুম ছাড়া উপায় নেই বলেই হয়তো ঘুমের পেছনে লেগে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ আবিষ্কার করছেন ঘুম নিয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত৷ এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলো জ্বালিয়ে ঘুমালে ওজন বাড়ে৷
আলো জ্বালিয়ে ঘুমাবেন না, ওজন বেড়ে যাবে!…………….
ফলে এখন নিশ্চয়ই ঘুমানোর আগে আরেকবার ভাবতে হবে, আলো জ্বালানো নাকি নেভানো হয়েছে৷ এর ফলে যেসব দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে সেখানে আরো একটু লাভ হবে বৈকি!আলো নিভিয়ে ঘুমানোর ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তো বটেই৷
আমেরিকার ওহাইয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ইঁদুরের উপর এই গবেষণা চালান৷ গবেষণার ফল প্রকাশিত হলো ‘প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স’ শীর্ষক সাময়িকীতে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, আট সপ্তাহ আলো জ্বালিয়ে ঘুমানোর ফলে ইঁদুরগুলোর ওজন বেড়েছে ৫০ শতাংশ৷ গবেষক দলের প্রধান লরা ফঙ্কেন বলেন, ‘‘সবগুলো ইঁদুরের কাজের মাত্রা এবং খাবারের পরিমাণ সমান রাখা হলেও আলোতে ঘুমন্ত ইঁদুরগুলো অন্যদের চেয়ে মোটা হয়ে গেছে৷”
যেসব ইঁদুরকে ১৬ ঘণ্টা দিনের আলো এবং আট ঘণ্টা মৃদু আলোতে রাখা হয়েছিল তাদের ওজন বেড়েছে ১২ গ্রাম করে৷ অন্যদিকে, যেগুলোকে ১৬ ঘণ্টা দিনের আলো এবং আট ঘণ্টা অন্ধকারে রাখা হয়েছিল তাদের ওজন বেড়েছে আট গ্রাম করে৷ এছাড়া খাবার গ্রহণের সময়সূচি যখন একই রাখা হতো তখন ওজন না বাড়লেও, এক্ষেত্রে অনিয়ম করা হলেই দেখা গেছে ওজন বেড়ে যেতে৷ ওজন বাড়ার এই প্রক্রিয়া প্রথম সপ্তাহ থেকেই লক্ষ্য করা গেছে৷ আর তা শেষ অবধি অব্যাহত ছিল৷ ফলে এটা থেকে বোঝা যায় যে, খাদ্য গ্রহণের সময়সূচির সাথেও ওজন বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে, বলেন ফঙ্কেন৷
গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওজন বাড়ার ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিপাক ক্রিয়ার উপর আলোর প্রভাব রয়েছে৷ ওহাইয়ো রাজ্যের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ব়্যান্ডি নেলসন বলেন, ‘‘রাতে আলো জ্বালিয়ে রাখার কারণে আমাদের গবেষণার ইঁদুরগুলোকে অসময়ে খাবার গ্রহণ করতে দেখা গেছে৷” তিনি বলেন, এই পরীক্ষার ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রেও সঠিক হলে রাতে দেরি করে খাবার গ্রহণের সাথে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার একটা সম্পর্কও পাওয়া যেতে পারে৷
ওষুধ নয়, ঘুম পাড়াবে জুঁই অথবা বেলি ফুল….
ঘুমের ওষুধের কথা ভুলে যান৷ ছোট্ট কয়েকটা তাজা জুঁই অথবা বেলি ফুল নাকের সামনে ধরুন৷ ঘ্রাণ নিন৷ দেখুন এটি ঘুমের ওষুধের মতোই কাজ করছে৷ অন্তত জার্মানির একদল গবেষকের সেরকমই দাবি৷
‘দ্য জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল কেমিষ্ট্রি’র অনলাইনে বলা হয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের যেকোনো ওষুধ কিংবা ভ্যালিয়াম যেভাবে কাজ করে জুঁই অথবা বেলি ফুলের সুগন্ধও এইকভাবে স্নায়ুতে এনে দেয় প্রশান্তি৷ যা মানুষের চোখে ঘুম নামিয়ে আনতে সাহায্য করে৷
বাজারজাত ওষুধগুলোর চেয়ে প্রাকৃতিক এই উপাদানটিই বেশি কার্যকরী বলে দাবি করছেন জার্মান গবেষকরা৷
জার্মানির ড্যুসেলডর্ফ শহরের হাইনরিস হাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওলগা জেরগেভা ও অধ্যাপক হেলমুট হাস এবং বোখুমের রুঢ় বিশ্ববিদ্যালয় বা আরইউবি-এর গবেষকরা একযোগে এই গবেষণাটি চালান৷ গবেষকদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক হানজ হাটে৷ তাঁরা আবিষ্কার করেছেন, ঘুমের ওষুধের যে উপাদানটি মানুষকে প্রশান্তি এনে দেয় জুঁই অথবা বেলি ফুলের সুগন্ধের মধ্যেও একই ধরণের উপাদান রয়েছে৷
[জুঁই অথবা বেলি ফুলের সুগন্ধ স্নায়ুতে এনে দেয় প্রশান্তি ]
জুঁই অথবা বেলি ফুলের সুগন্ধ স্নায়ুতে এনে দেয় প্রশান্তি
গবেষকরা এ নিয়ে বিশদ আকারে গবেষণা করেন৷ প্রায় ১০০ ধরণের সৌরভ নিয়ে মানুষ ও ইঁদুরের ওপর চালানো হয় গবেষণা৷ এরমধ্যে এমন দু’টি সৌরভ খুঁজে পান তাঁরা, যেগুলোতে এমন উপাদান রয়েছে যা কিনা বাজারে প্রচলিত ঘুমের ওষুধের মতোই শক্তিশালী৷ বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সুগন্ধ ফুসফুস থেকে রক্তে যায় এবং সেখান থেকে মস্তিষ্কে যায়৷ এই সুগন্ধ মস্তিষ্কে প্রশান্তি এনে চোখে ঘুম নিয়ে আসে৷
শুধু ঘুমের জন্যই নয়, স্নায়ুবিক উত্তেজনা প্রশমনের জন্যও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়৷ পশ্চিমা বিশ্বের শতকরা ২০ ভাগ মানুষ প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে ঘুমের ওষুধ খান৷ আর বিশ্বের মধ্যে এখনও পর্যন্ত বহুল প্রচলিত ঘুমের ওষুধগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বেনজোডায়াজেপিনেস৷ এ ওষুধটি মানুষকে ধীরে ধীরে আসক্ত করে ফেলে৷ সেইসঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায় বিষন্নতা, চোখে অন্ধকার দেখা, উৎকন্ঠা, মাংসপেশীর দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা৷ অন্যদিকে প্রকৃতিগতভাবেই জুঁই বা বেলি ফুলের ঘুম পাড়ানোর ক্ষমতা থাকলেও এর কিন্তু কোনরকমই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই৷
সুস্থ থাকতে চাইলে ঠিক ৭ ঘন্টা ঘুমান.
ভেবে বলুনতো, আপনি দিনে কত ঘন্টা ঘুমান? পাঁচ, ছয়, সাত নাকি আট ঘন্টা৷ নাকি তার চেয়েও বেশি বা কম৷ উত্তরটা যদি হয় সাত, তাহলে একদম ঠিক আছে৷ আর তা না হলেই বিপদ৷ এমনটাই আভাস দিচ্ছে একটি গবেষণার ফলাফল৷
যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে গবেষণাটি৷ ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ছিলেন এর পেছনে৷ আর যে ম্যাগাজিনে গবেষণাটি ছাপা হয়েছে সেটির নাম ‘স্লিপ’ অর্থাৎ ঘুম৷ প্রায় ত্রিশ হাজার বয়স্ক মানুষের তথ্য পর্যালোচনা করে বের করা হয়েছে ফলাফল৷
কিন্তু কী আছে সেই ফলাফলে? বলা হয়েছে, সাত ঘন্টার কম বা বেশি যারা ঘুমায় তাদের বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ যারা দিনে পাঁচ ঘন্টার কম ঘুমান তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা, যারা সাত ঘন্টা ঘুমান তাদের চেয়ে দুই গুন বেশি৷
আর যারা নয় ঘন্টা বা তার বেশি সময় ঘুমান তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি, সাত ঘন্টা যারা ঘুমান তার চেয়ে দেড়গুন বেশি৷
তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ৬০ বছর বয়সের নিচে যারা, তারা৷ কারণ গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, এই বয়সের লোকদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা, সাত ঘন্টা ঘুমানো মানুষের চেয়ে তিনগুন বেশি৷
সবচেয়ে কম বা সবচেয়ে বেশি সময় ঘুমের কারণে স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা থাকে বলে জানা গেছে৷
তবে একই ম্যাগাজিনে আরও একটি বিষয়ে গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে, যারা দিনের পর দিন রাতে চার ঘন্টার কম সময় ঘুমানোর সুযোগ পান তারা যদি পরে কোন সময় ৯ বা ১০ ঘন্টার মত ঘুমানোর সুযোগ পায় তাহলে সেটা বরং উপকারী হবে৷ এই গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রেরই পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগ৷ ১৪২ জনের ওপর করা হয়েছে গবেষণাটি৷
ঘুম সমস্যায় বাংলাদেশের নারীরা শীর্ষে…………..
তথ্যটা জানা গেছে ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি জরিপ থেকে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত এই জরিপে আট দেশের প্রায় ৪৪ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের মানুষ অংশ নিয়েছেন৷
জরিপে অংশ নেয়া বাংলাদেশের প্রায় ৪৩.৯ শতাংশ নারীর মধ্যে ঘুমের সমস্যা পাওয়া গেছে৷ অর্থাৎ, উন্নত বিশ্বে যতসংখ্যক নারী ঘুম সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুন! অবশ্য বাংলাদেশের পুরুষদের মধ্যে ঘুমের সমস্যায় ভোগার পরিমাণ নারীদের প্রায় অর্ধেক৷ সংখ্যার হিসেবে ২৩.৬ শতাংশ৷
কারণ
ঘুমের সমস্যায় ভোগার অনেকগুলো কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটো হলো হতাশা আর উদ্বেগ৷ বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রেও সেটা সত্য বলে জরিপে জানা গেছে৷
গবেষণার বিস্তারিত
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঘানা ও দক্ষিণ আফ্রিকার দুটো প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করে৷ বাংলাদেশসহ ঘানা, তাঞ্জানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার গ্রামাঞ্চল এবং কেনিয়ার শহরাঞ্চলের ২৪,৪৩৪ জন নারী এবং ১৯,৫০১ জন পুরুষ জরিপে অংশ নেন৷
ঘুম সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে উন্নত বিশ্বে অনেক গবেষণা হলেও উন্নয়নশীল বিশ্বের সমস্যা নিয়ে ওটাই ছিল প্রথম গবেষণা৷ আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নারীদের মধ্যেই ঘুমের সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে৷ আর পুরুষদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় স্থানে৷
‘স্লিপ’ নামক জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে৷
অনিদ্রায় একমাত্র ভরসা ঘুমের ওষুধ?.
ঘুমের ওষুধের খুব একটা সুনাম নেই৷ বলা হয় এসব বিপজ্জনক ও আসক্ত করে৷ কিন্তু অনিদ্রা যাঁদের নিত্যসঙ্গী তাঁদের কাছে ঘুমের ওষুধের দিকে হাত বাড়ানো ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না৷ আর এরকম ঘটনা ঘটছে হামেশাই৷
আনে-মারিও একজন ভুক্তভোগী৷ ১৯ বছর আগে দেখা দেয় এই যন্ত্রণা৷ আনা মারির ভাষায়, ‘‘তা ছিল ১৯টি কষ্টকর বছর৷ অনিদ্রা যাঁদের হয়নি, তাঁরা তা বুঝবেন না৷” মায়ের মৃতদেহ ছোঁয়ার পর থেকেই শুরু হয়৷ স্মরণ করে বলেন আনে মারি৷ ‘‘আমি জানতাম না মানুষের শরীর এত ঠাণ্ডা হয়৷ এটা ছিল একটা শক৷” সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন আনা মারি৷ তারপর আরো অনেক রাত এইভাবে কাটে৷ ছোটেন ডাক্তারের কাছে৷ সেখানে অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি তিনি৷
এখন আনে মারির বয়স ৬৮৷ বাস করেন জার্মানির বন শহরের কাছে লোমার শহরে৷ সেখান থেকে এক ঘন্টার মধ্যেই প্রায় সব ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে পারেন তিনি৷ এইসব চিকিত্সকের কেউ তাঁকে সাহায্য করতে পারেননি৷
অবশেষে এক উপায় বের করেন তিনি৷ প্রতি রাতে চার ভাগের এক ভাগ ঘুমের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন৷ ‘‘বছর দশেক আগে আমার মনে হয়েছিল, হয় এই ওষুধ তুমি খাও, নয় মৃত্যুবরণ করো৷ ঘুম পানাহারের মতই জরুরি”, বলেন আনে-মারি৷
অনেক সময় রোগীরা পরদিন সকালে ক্লান্তি বোধ করেন৷
অনিদ্রার কবলে অনেক মানুষ
রবার্ট কখ ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানির ২৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে অনিদ্রার লক্ষণ দেখা যায়৷ অ্যামেরিকার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ক্রনিক অনিদ্রায় ভোগেন৷ এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্লিপ ডিসওর্ডার রিসার্চ’৷
একটি ক্লিনিকের স্লিপিং সেন্টারের প্রধান হান্স গ্যুনটার ভিস জানান, ‘‘রোগীরা শোবার ঘরে এসেও সব চিন্তাভাবনা দূর করতে পারেন না৷ দৈনন্দিন নানা ঘটনা তাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে৷” এছাড়া শারীরিক কারণেও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে৷ যেমন থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যাতেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে৷
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ঘুমের ওষুধ আছে কী?
গবেষকরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ঘুমের ওষুধ আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন৷ কয়েক দশক আগে বারবিচুরেট ঘুমের ওষুধ হিসাবে নাম করেছিল৷ কিন্তু এর উপাদান মানুষকে নির্ভরশীল করে৷ একটি দুঃখজনক ঘটনা থেকে ওষুধটির নাম ছড়িয়ে যায় বিশ্বব্যাপী৷ হলিউডের চিত্রতারকা মেরিলিন মনরো বেশি ডোজে এই ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন৷
এরপর বাজারে আসে বেনজোডায়াজোপিন৷ এটাও মস্তিষ্কে এমন সংকেত পাঠায় যাতে ঘুম আসে৷ তবে এর উপাদান মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশকেও প্রভাবিত করে, যেসব মানুষের অনুভূতি, নড়াচড়ার সমন্বয় ও মনমেজাজের জন্য জরুরি৷ এই ওষুধ এখনও পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে এর চেয়েও ভালো একটি বিকল্প এসেছে বাজারে৷ এটির নাম জেড-ড্রাগ বলা হয়৷ এতে কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলির নাম জেড দিয়ে শুরু৷ এই ওষুধও ঘুম পাড়ায়, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম৷ এখন অনিদ্রার চিকিত্সায় সাধারণত এই ওষুধও দেওয়া হয়ে থাকে৷
ভেষজ ওষুধও কাজে লাগতে পারে
এছাড়া বালড্রিয়ান বা ভ্যালেরিয়ানার মতো ভেষজ ওষুধও ঘুমের ব্যাঘাত হলে সাহায্য করতে পারে৷ তবে সমস্যাটা হালকা হলেই কেবল এই ওষুধ কাজে লাগে৷ অনিদ্রা জেঁকে বসলে উদ্ভিজ ওষুধ তেমন কাজে লাগে না৷
আধুনিক ঘুমের ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম থাকলেও পুরোপুরি মুক্ত নয়৷ অনেক সময় রোগীরা পরদিন সকালে ক্লান্তি বোধ করেন৷ গাড়ি চালাতে পারেন না৷ এই ধরনের ওষুধ দুই সপ্তাহের বেশি নিলে পরে ওষুধ ছাড়া আর ঘুমই আসে না৷ অনেকদিন পর হয়ত কাজই করে না ঘুমের ওষুধ৷
আনে মারি জানান, তিনি ঘুমানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করেছেন কিন্তু সফল হননি৷ এজন্য ‘সেল্ফ হেল্প গ্রুপ’-ও গড়ে তুলেছিলেন৷ কিন্তু কিছুদিন পর অংশগ্রহণকারীরা আর আসতে পারেননি৷ ‘‘দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে সন্ধ্যার সময় খুব ক্লান্ত থাকতেন তারা৷ তাই এই আসরে আসা সম্ভব হয়নি,” জানান আনে-মারি৷
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, ঘুমের ট্যাবলেট সাময়িকভাবে নেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু স্থায়ী সমাধান হতে পারেনা৷ ওষুধ দিয়ে লক্ষণটা কমানো যায় কিন্তু অনিদ্রার আসল কারণ দূর করা যায় না৷
কম ঘুমের কারণে ওজন বাড়তে পারে..
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে দিনটা যেমন ঝরঝরে হয় না কাটে নেশাচ্ছন্নভাবে, তেমনই হজমেও সমস্যা হয়৷ শরীরে অবসাদ ভর করে, শক্তিও কমে যায়৷ আর এসবই বলছে, একটি ইউরোপীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা৷
অ্যামেরিকান জার্নাল ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’এ প্রকাশিত ঐ সমীক্ষার ফলাফলে প্রমাণ উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে, কম ঘুম ওজন বাড়াতে সাহায্য করে৷ কম ঘুম শুধু যে ক্ষুধা বাড়ায় তাই নয়, ক্যালোরি ধ্বংস করে খুবই কম৷ সমীক্ষাকাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টিয়ান বেনেডিক্ট৷ তিনি বললেন, যথেষ্ট ঘুম ওজন বাড়ানো প্রতিরোধ করে, সমীক্ষা থেকে তাই বের হয়ে এসেছে৷ তিনি লিখেছেন, সমীক্ষাতে আমরা দেখেছি, এক রাত যদি ভালোমত ঘুম না হয়, তাহলে সুস্থ মানুষের শরীরেও ক্লান্তি ভর করে, অবসাদ জেঁকে বসে৷”
এর আগেও বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘুমের ব্যাঘাত ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত৷ শুধু তাই নয়, আরো দেখা গেছে, মানুষ যখন জেগে থাকে তখনও কম ঘুম কী ভাবে, চাপ এবং ক্ষুধার সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোনগুলোর স্বাভাবিক মাত্রাতে ব্যাঘাত ঘটায়৷
কম ঘুমের কারণে শরীরে আসলে কী ধরণের প্রভাব পড়ে তা শনাক্ত করতেই বেনেডিক্ট এবং তাঁর সহকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন ছাত্রের ঘুমের বিভিন্ন পর্যায় পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ স্বল্প ঘুম, একেবারে না ঘুমানো এবং স্বাভাবিক ঘুমের কারণে কয়েকদিন শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ, হরমোনের মাত্রা এবং তাদের বিপাক প্রক্রিয়ায় কী ধরণের পরিবর্তন হয় সেটা তাঁরা লক্ষ্য করেছেন৷
সেখানে দেখা গেছে, মাত্র একদিন ঘুম না হলে, পরেরদিন সকালে বিপাক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়৷ রাতে যার খুব ভালো ঘুম হয়েছে তার সাথে তুলনা করে দেখা গেছে, যার ঘুম হয়নি তার শরীরে ক্লান্তি ভর করেছে, নিশ্বাস নেওয়া বা হজমের মত ব্যাপারগুলো শতকরা কুড়িভাগ থেকে নেমে এসেছে শতকরা পাঁচ ভাগে৷
দেখা গেছে, ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টির পরে সকালে একজন অল্প বয়সের পুরুষের রক্তে চিনির মাত্রা, ক্ষুধা বৃদ্ধির হরমোন ঘ্রেলিনের মাত্রা এবং চাপ বৃদ্ধির হরমোন কর্টিসলের মাত্রা অনেক বেশি৷ এর আগের কয়েকটি সমীক্ষাতে দেখা গেছে, যারা পাঁচ ঘন্টা বা তারও কম ঘুমান, খুব দ্রুত তাদের ওজন বাড়ে এবং ওজনের সঙ্গে সমর্কিত রোগ টাইপ-টু ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হন৷

Dilip Poddar

About Dilip Poddar -

He is 25 year old geeky nerd from a little town in India. He is an avid Blogger, Web Designer and Freelancer. He is mostly interested in SEO and playing with codes.our New Blogger ko hamesha honest ka sath help karte.

Subscribe to this Blog via Email :